সবুজ পাহাড়ে বিদ্রোহের অগ্নিশিখা

 প্রকৃতির লীলা নিকেতন পার্বত্য চট্টগ্রামে হতে পারতো প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড; হয়ে গেলো অগ্নিগর্ভ।শান্তি যেখানে ছিল স্বাভাবিক, সেখানেই অবশ্যম্বাবী হয়ে উঠলো বিদ্রোহ, অশান্তি, হানাহানি, রক্তপাত…।পার্বত্য চট্টগ্রামকে আর ডাকা সম্ভব হলো না নিজস্ব নামে ডাকতে হলো অন্য নামে : “The Fearful State” (S.Mahmud Ali 1993); সবুজ পাহাড়ের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হিংসার ঝরনাধারা(হুমায়ুন আজাদ-১৯৯৭); “The Hitch in the Hills”(Syed Murtaza Ali 1988)।

https://medication360.blogspot.com/

সৌন্দর্যের রানী পার্বত্য জনপদে শান্ত সমাহিত চেহারার বদলে চোখে ভেসে উঠতে লাগলো বিদ্রোহের অগ্নিশিখায় প্রজ্জ্বলিত এক বিভাষিকাময় অঞ্চল।পাহাড়ের শান্তিপ্রিয় মানুষের গর্জে ওঠার পেছনে একটি নয়,অনেক কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে।মূলত ষাট দশকে দানা বেঁধে ওঠা পার্বত্য বিচ্ছিন্নতাবাদ যখন সত্তর দশকে শাসক গোষ্ঠীর অবিমিষ্যকামীতার জন্য বিদ্রোহে পরিণত হয়, তখনই আমাদের এবং সমগ্র বিশ্বের সামনে সংকটগুলো ভেসে উঠে।কিন্তু পার্বত্য বিদ্রোহ একদিনে কিংবা একটি মাত্র ঘটনার ফলে সৃষ্টি হয়েছে এমন ধারণা মোটেও সঙ্গত হবে না।পাহাড়ীদের প্রতি শতাব্দীর পর শতাব্দী যে বঞ্ছনা, শোষন ও নিপীড়ন করা হয়েছে তার স্বাভাবিক বহিঃপ্রকাশই ছিল সাম্প্রতিক বিদ্রোহের উৎসমুখ।পাকিস্তানিরা ২৫ বছর শাসন-শোষণে শুধূমাত্র বাঙ্গালিদের ওপর জুলুম করেই ক্ষান্ত হয়নি,ব্রিটিশদের মতো তারাও এমন একটি কাজ করে গেছে, যাতে বাঙ্গলি-পাহাড়ী সংঘাত জেগে থাকে।ব্রিটিশরা করে ছিল “ডিভাইড এন্ড রুল” অর্থাৎ “ভাগ করো এবং শাসন করো” নীতি।যার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে ‍দিয়ে উপমহাদেশের হিন্দু ও মুসলমানদের বিভক্ত করে নিবিঘ্ন রেখেছিল শাসন।পাকিস্তানিরাও পাহাড়ীদের জীবন অন্ধকার করে পূর্ব বাংলাকে উজ্জ্বল করার “মাছের মায়ের পুত্র শোক” নাতি গ্রহন করে ভাব ধরেছিল যে তারা বাঙ্গালির স্বার্থে অনেক কিছু করেছেন।অর্থাৎ কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে বাংলাদেশকে আলোকিত করার সাথে সাথে পাহাড়ে ছড়িয়ে দিয়েছিল বিদ্বেষের কালো অন্ধকার। বাংলাদেশ আলোকিত হলো আর পাহাড়ীদের ঘরবাড়ি অতল জলে তলিয়ে গেলো।বাঙ্গালিদের খুঁশি করার নামে পাকিস্তানিরা সুকৌশলে উপহার দিল একই অঞ্চলের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ক্ষোপ।১৯৬০ সালে পাকিস্তান তাঁদের পানিতে ভাসিয়ে দেয়, জলে ডুবিয়ে দেয়: পাকিস্তানের যা ছিল বিদ্যুৎ তাঁদের জন্য ছিল বিপর্যয়।কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসাতে দিয়ে ডুবে যায় তাঁদের বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি এবং বাড়িঘর: ৫৪০০০ একর বা ৩৫০ বর্গমাইল উর্বর জমি(যা ছিল সমগ্র পার্বত্য এলাকার চাষাযোগ্য ভূমির ৪০% ভাগ) হারিয়ে যায় জলে।তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল পাকিস্তান( বিঘা প্রতি পাঁচ টাকা) তার জন্য দেয়ার কথা ৫ কোটি টাকা, তবে দেড় কোটির বেশি টাকা দেয়া হয়নি।ওই টাকার বেশি ভাগই তাদের হাতে পৌছাইনি।ওই টাকা বেশি ভাগ খেয়েছিল রাজনীতিবিদ ও আমলারা, আর বাকি অংশ কখনো ছাড়াই হয়নি।

লেখক:-মাহফুজ পারভেজ                    

বই- বিদ্রোহী পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি