১৭ বছর জেদ করে জঙ্গলে থাকেন চন্দ্রশেখর সঙ্গী অ্যাম্বাসাডর আর সাইকেল

১৭-বছর-জেদ-করে-জঙ্গলে-থাকেন-চন্দ্রশেখর-সঙ্গী-অ্যাম্বাসাডর-আর-সাইকেল

একটি অ্যাম্বাসাডর আর একটি সাইকেল, সম্পত্তি বলতে এইটুকুই। এই সম্বলটুকু জড়িয়েই ঘরে ফেরার স্বপ্ন দেখে ১৭ বছর জঙ্গলেই কাটিয়ে দিলেন চন্দ্রশেখর। জঙ্গলের সাপ, চিতাবাঘ, বন্য শূকর, হাতিরাও যেন তাঁকে আপন করে নিয়েছে। তাঁকে ১৭ বছরে তাই বন্যপ্রাণীদের হামলার শিকার হতে হয়নি।

৫৬ বছরের চন্দ্রশেখর কর্নাটকের দক্ষিণ কন্নড় জেলার সুলিয়া তালুকের অ্যাডটেল গ্রামের বাসিন্দা। ওই গ্রামে এখন অবশ্য তিনি থাকেন না। গ্রামের এক পাশে থাকা জঙ্গলই তাঁর ঠিকানা। চন্দ্রশেখর নিজের শখের অ্যাম্বাসাডর এবং সাইকেল নিয়ে ওই জঙ্গলেই ঘর বেঁধেছেন।

চন্দ্রশেখরকে এক ঝলক দেখে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে মনে হতেই পারে। তিনি কিন্তু মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ। জেদের কারণে সব থেকেও সর্বহারাদের মতো জীবন বেছে নিয়েছেন চন্দ্রশেখর। তাঁর জেদ নিজের চাষের জমি ফিরে পাওয়া।
ওই গ্রামে দেড় একরের একটি চাষের জমি ছিল চন্দ্রশেখরের। জমিতে সুপারি চাষ করতেন তিনি। ২০০৩ সালে চাষের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু সময়ে শোধ করতে পারেননি। এর পরই তাঁর জমি বাজেয়াপ্ত করে ব্যাঙ্ক। দুঃখে, রাগে সে দিনই ঘর ছেড়েছিলেন চন্দ্রশেখর। নিজের অ্যাম্বাসাডর চালিয়ে বোনের বাড়ি গিয়ে উঠেছিলেন।

বেশি দিন সেখানেও ঠাঁই হয়নি তাঁর। তার পরই গ্রামের পাশে জঙ্গলে আশ্রয় নেন। একটি কালো প্লাস্টিক দিয়ে অ্যাম্বাসাডরের উপর ছাউনি করেন। কখনও গাড়ির ভিতরে আবার কখনও গাড়ির উপরে ঘুমিয়ে রাত কাটিয়ে দেন তিনি। সঙ্গে রয়েছে তাঁর একটি সাইকেলও।

এই জঙ্গলে বিষধর সাপ, চিতাবাঘ, বাইসন, বুনো শূকর, হাতি সবই রয়েছে। কিন্তু কখনও চন্দ্রশেখরর উপর হামলা করেনি তারা। এমনকি জঙ্গলে এ ভাবে আশ্রয় নেওয়া বেআইনি হওয়া সত্ত্বেও বন দফতর তাঁকে কিছু বলে না। কারণ, চন্দ্রশেখর কোনও প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করেন না। পেট চালানোর জন্য জঙ্গলের শুকিয়ে যাওয়া লতা দিয়ে ঝোড়া বানান। পাশের গ্রামের বাজারে সেই ঝোড়া বিক্রি করে চাল, ডিল, সব্জি কিনে আনেন চন্দ্রশেখর।

চন্দ্রশেখর কখনও ঝরে পড়া ফল খেয়ে নেন। আজ পর্যন্ত গাছের একটি পাতাও ছেড়েননি এবং কোনও প্রাণীকে হত্যাও করেননি। বন দফতর তাই তাঁকে জঙ্গলের রক্ষক বলেই মনে করে।

চন্দ্রশেখর ১৭ বছরেও নিজের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি। জমির কাগজপত্র সব এখনও নিজের কাছে গুছিয়ে রেখেছেন। ঝোড়া বেচে অল্প অল্প করে টাকা জমাচ্ছেন। জীবনের একটিই লক্ষ্য, জমি এক দিন ফেরাতেই হবে।

চন্দ্রশেখর বাইরের সমাজের সঙ্গে একপ্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। চন্দ্রশেখরকে কিন্তু এক নামে আশাপশের গ্রামের সকলেই চেনেন। কারও সঙ্গে মেশেন না, দিনভর শুকনো লতা জোগার করে ঝোড়া বানানোই কাজ তাঁর। তাঁর কাছে পৌঁছতে হলে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পায়ে হাঁটা পথে তিন-চার কিলোমিটার যেতে হয়। দূর থেকে কালো প্লাস্টিকের ছাউনি চোখে পড়বে তার পরই।

চন্দ্রশেখরের নেই কোনও আধার কার্ড কিন্তু পরিচিতির জন্যই পাশের গ্রামের পঞ্চায়েত থেকে তাঁকে কোভিড টিকা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা জঙ্গলের মধ্যে হেঁটে গিয়ে তাঁর কাছে পৌঁছেছিলেন।

তথ্যঃ আনন্দ বাজার।