লাভা এবং ম্যাগমার মধ্যে পার্থক্য কী?

লাভা-এবং-ম্যাগমার-মধ্যে-পার্থক্য-কী?

আগ্নেয়গিরি কেন বিস্ফোরতি হয় এবং অন্যান্যগুলো কেন ধীরে ধীরে ক্ষরিত হয়? এর সবগুলো তাদের চটচটে কেন্দ্রের দিকে ধাবিত হয়। হাওয়াই এর কিল্যোয়ে ভলকানো থেকে অবিরত সিরাপী লাভা বিস্ফোরিত হতে থাকে, যা প্রকৃতির ধ্বংসাত্বক শক্তি সম্পর্কে আমাদের কাছে এক জ্বলন্ত উদাহারণ। কিন্তু এই চলমান অগ্নুৎপাদন যেহেতু আমাদের শিরোনামের অংশ, সেহেতু আপনার মনে একটা প্রশ্ন জাগতেই পারেঃ ম্যাগমা এবং লাভার মধ্যে পার্থক্য কী?

মূলত অবস্থান ভেদে ম্যাগমা এবং লাভার মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করা হয়। যখন ভূতাত্ত্বিকগণ ম্যাগমা বলে, তখন তারা মূলত গলিত শিলা সম্পর্কে কথা বলছে যা এখনো ভূগর্ভস্থ অবস্থায় আটকে আছে। যদি এই গলিত শিলা ভূপৃষ্টে তরল আকারে প্রবাহিত হয়, তখন একে লাভা বলা হয়। রাসায়নিক মিশ্রণের উপর ভিত্তি করে ম্যাগমা সমূহ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে এবং যে আগ্নেয়গিরি এগুলোকে ধরে রাখে তার উপাদানের পার্থক্যের উপর ভিত্তি করেও ম্যাগমা সমূহ ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।

হাওয়াইয়ের মত মাফিক ম্যাগমা সমূহ গলে সমুদ্রের তলদেশ এর মত ভারী শিলাতে পরিণত হয়। এই ম্যাগমা সমূহ শতকরা ৪৭ ভাগ থেকে ৬৩ ভাগ পর্যন্ত সিলিকা বহন করে। সিলিকা হলো একধরনের খনিজ যা দিয়ে কাঁচ এবং স্ফটিক তৈরি করা হয়। যতদূর পর্যন্ত গলিত শিলা যায়, মাফিক ম্যাগমা সমূহ মোটামুটি সান্দ্রতা নিয়ে গুড় থেকে চিনাবাদাম সহ প্রবাহিত হয়। ম্যাগমা সমূহের উত্তপ্ততাও বিচিত্র ধরনের যেগুলোর তাপমাত্রা ১৮০০ থেকে ২২০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত বিস্তৃত।

হাওয়াই এর কিল্যোয়ে আগ্নেয়গিরি অগ্নুৎপাত এর সবচেয়ে বিপদজনক দিকগুলো কি?
অন্যদিকে সিলিক্লিক ম্যাগমা সমূহ গঠিত হয় হালকা মহাদেশীয় শিলা গলিত হওয়ার কারণে। এই ম্যাগমা সমূহে শতকরা ৬৩ ভাগ সিলিকা থাকে, যার কারণে এগুলো আরো বেশী চিটচিটে হয়ে থাকে। যখন এগুলো প্রবাহিত হয় এগুলো দেখতে চর্বির মত দেখায়-যা বলতে গেলে আসলে কোন ভাল লক্ষণ নয়। এগুলো অবশ্য মাফিক ম্যাগমা সমূহের চেয়ে ঠান্ডা হয়ে থাকে। রাইয়োলাইট হলো একধনের সিলিকা সমৃদ্ধ লাভা যার তাপমাত্রা ১২০০ থেকে ১৫০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠানামা করে।

এতগুলো মানুষ কেন সক্রিয় আগ্নেয়গিরির কাছাকাছি বসবাস করে?
যেহেতু সিলিকা ম্যাগমা মাফিক ম্যাগমার চেয়ে ঠান্ডা, সেহেতু ম্যাগমাতে দ্রভীভূত গ্যাসগুলো যেকোন সময় চাপের কারণে বেরিয়ে আসতে পারে। এই কারণে সিলিকা ম্যাগমা সমূহ অত্যাধিক বিপদজনক। যত বেশী গ্যাস এই ম্যাগমার মধ্যে জমা হবে, তত বেশী সেগুলো বিস্ফোরক হয়ে উঠবে, সোডার মধ্যে অধিক থেকে অধিকতর কার্বোনেশন করলে যেমন হয় ঠিক তেমন।

যখন সিলিকা ম্যাগমার মধ্যে পর্যাপ্ত উচ্চ চাপ থাকে না, গ্যাস সমূহ সেখানে দ্রবীভূত হয়ে যায় এবং বুদবুদ আকারে ম্যাগমা থেকে বের হয়ে আসে। এবং ঠিক ঝাঁকুনি দেওয়া সোডার ক্যানের মত বাষ্প সমূহ বিস্ফোরিত হয়ে অগ্নুৎপাত হতে থাকে। শঙ্কু আকৃতির আগ্নেয়গিরিগুলোকে বলা হয় স্ট্র্যাটোভলকানো, যেমন মাউন্ট পিনাটুবো সিলিক্লিক ম্যাগমা দ্বারা পূর্ণ থাকে।

অন্যদিকে হাওয়াই আগ্নেয়গিরি বিশেষত কম সিলিকাপূর্ণ ম্যাগমা ব্যাসল্ট (অগ্নিয়গিরিজাত শিলা) দ্বারা তৈরি, যার মানে এগুলো কম তেজস্ক্রিয় শক্তিসম্পন্ন। ধীরে ধীরে ক্ষরিত এবং ছড়িয়ে পরার পরিবর্তে, সেগুলো আগ্নেয়গিরির ঢাল তৈরি করে, ধীরে ধীরে ঢালু আকারে ধারণ করে দ্বীপে পরিণত করে যা আসলে ভূতাত্ত্বিক মসীবর্ণ ছায়া-পরিলেখ।