সুইজারল্যান্ডের ইতিহাস,নামকরণ,জনসংখ্যা,দর্শনীয় স্থান,অর্থনীতি,রাজনীতি,সংস্কৃতি।

সুইজারল্যান্ডের ইতিহাস ১৮৪৮ সালে সুইস কনফেডারেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুইজারল্যান্ডের ঘটনাবলি বিবৃত করে। ১৮৪৮ সাল থেকে সুইস কনফেডারেশন সায়ত্ত্বশাসিত ক্যান্টনের ফেডারেল প্রজাতন্ত্র ছিল, এর মধ্যে কিছু কনফেডারেসি ৭০০ বছরের অধিক পুরনো ছিল। ফলে এটি এখনো বিদ্যমান বিশ্বের প্রাচীনতম কনফেডারেসির একটি।

এই অঞ্চলের প্রারম্ভিক ইতিহাস আলপাইন সংস্কৃতির সাথে সম্পর্কিত। হেলভেট্টি জাতি সুইজারল্যান্ডে বসবাস করত। দেশটি খ্রিষ্টপূর্ব ১ম সহস্রাব্দে রোমান শাসনের অধীনে আসে। ধ্রুপদী সভ্যতার শেষভাগে গ্যালো সংস্কৃতি জার্মান প্রভাবে প্রভাবিত হয় এবং সুইজারল্যান্ডের পূর্ব অংশ আলেমানিক ভূখণ্ডের অংশ হয়। ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে সুইজারল্যান্ড এলাকাটি ফ্রানকিস সাম্রাজ্যের সাথে যুক্ত হয়। মধ্যযুগের মধ্যবর্তী সময়ে পূর্ব অংশটি পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের সোয়াবিয়া ডিউকশাসিত এলাকা এবং পশ্চিম অংশটি বুরগুন্ডির অংশ হয়।

পতাকা

সুইজারল্যান্ডের নিরপেক্ষতার লম্বা ইতিহাস রয়েছে—১৮১৫ সালে থেকে এখানে কোন যুদ্ধ হয়নি— এবং রেড ক্রস, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাসহ এখানে বহু আন্তর্জাতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১৯২০ সালে সুইজারল্যান্ড জাতিপুঞ্জের সদস্য হয় আর ১৯৬৩ সালে ইউরোপের কাউন্সিলে যোগ দেয়। বিশ্বযুদ্ধের সময় সুইজারল্যান্ড আক্রান্ত হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানি সুইজারল্যান্ড আক্রামণের পরিকল্পনা করলে তারা কোন প্রকারের আক্রমণ করিনি।

প্রারম্ভিক ইতিহাস

প্রাক-ইতিহাস

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে ১৫০,০০০ বছর পূর্বে মধ্য পুরা প্রস্তর যুগে শিকার-সংগ্রহকারীরা আল্পস পর্বতের উত্তরের নিম্নভূমিতে বসবাস করত। নব্য প্রস্তর যুগে এই এলাকাটি গণবসতিপূর্ণ হয়ে ওঠে। আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৩৮০০ অব্দের ব্রোঞ্জ যুগের পাইল বসবাসকারীদের অবশিষ্টাংশ অনেক হ্রদ এলাকায় পাওয়া যায়। খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ অব্দের দিকে কেল্টীয় আদিবাসীরা এই এলাকায় বসবাস করত। রেটীয় জাতি পূর্ব অঞ্চলে এবং হেলভেট্টি জাতি পশ্চিম অঞ্চলে বাস করত।

২০১৭ সালের মার্চ মাসে আউসের্সিলে কার্ন স্কুল কমপ্লেক্সের জন্য নির্মাণ প্রকল্পের খোদাই কাজের সময়ে একটি গাছের ট্রাঙ্ক থেকে আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ২০০ অব্দের একজন মহিলার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রত্নতত্ত্ববিদগণ জানান যে মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল আনুমানিক ৪০ বছর এবং জীবিত অবস্থায় শারীরিক পরিশ্রম করতেন। মহিলাটির সাথে ভেড়ার চামড়ার কোট, বেল্টের চেইন, পশমের পোশাক, একটি ওড়না, একটি দোদুল্যমান কাচ ও হলদে পাথরের তসবিহ আবিষ্কৃত হয়।

মধ্যযুগ

ক্যারোলিঞ্জীয় রাজাদের অধীনে সামন্তবাদ বিকশিত হয় এবং রাজতন্ত্র ও বিশপদের রাজত্ব শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করত। ৮৪৩ সালে বুরগুন্ডি ও লোথারিঞ্জিয়ার মধ্যে এবং আলেমানিয়া ও জার্মান লুইসের পূর্ব রাজ্যের মধ্যে ভেরডুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

১০ম শতাব্দীতে ক্যারোলিঞ্জীয়দের প্রভাব হ্রাস পায় এবং ম্যাগিয়াররা ৯১৭ সালে বাসেল ও ৯২৬ সালে সেন্ট গ্যালেন ধ্বংস করে।

আধুনিক সুইজারল্যান্ড

শিল্পায়ন

গৃহযুদ্ধের ফলে সুইজারল্যান্ডে ১৮৪৮ সালে ফেডারেল সংবিধান গ্রহণ করে। ১৮৭৪ সালে এতে ব্যাপক সংশোধন আনা হয় এবং প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, ও আইনি বিষয়ে ফেডারেল সরকারে উপর ও অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে ক্যান্টোনাল সরকারের উপর দায়ভার ন্যস্ত করা হয়। তখন থেকে ২০শ শতাব্দীর অধিকাংশ সময়ে সুইস ইতিহাসে ধারাবাহিকভাবে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রবৃদ্ধি এসেছে।

সুইজারল্যান্ড মূলত গ্রামীণ এলাকা হলেও ১৯শ শতাব্দীর শেষভাগে শহরগুলোতে শিল্প বিপ্লব পূর্ণতা লাভ করে, বিশেষ করে টেক্সটাইল শিল্পে। উদাহরণস্বরূপ, বাসেলে রেশমসহ টেক্সটাইল ছিল অন্যতম প্রধান শিল্প। ১৮৮৮ সালে নারীরা ৪৪% পারিশ্রমিক গ্রহীতা ছিল। অর্ধেকের কাছাকাছি নারী টেক্সটাইল মিলে কাজ করতেন, অন্যদিকে গৃহপরিচারিকা ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্মের শাখা। ১৮৯০ থেকে ১৯১০ সালের মধ্যে নারী শ্রমিকের সংখ্যা ১৯৬০-এর দশকের শেষভাগ থেকে ১৯৭০-এর দশকের চেয়ে বেশি ছিল।

রাজনীতি

দেশটির রাজনৈতিক অবস্থা ভারসাম্যমূলক ও অত্যন্ত সুস্থির। সুইস সরকারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিবছর ১লা জানুয়ারি তারিখে এর রাষ্ট্রপতি পরিবর্তিত হয়। ছয় বৎসরের জন্য গঠিত মন্ত্রীপরিষদের একে জন মন্ত্রী পালাক্রমে এক বৎসরের জন্য রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন।

প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ

সুইজারল্যান্ডে মোট ২৬টি ক্যান্টন রয়েছে। ঐতিহাসিক কনফেডারেশনের সময় এর প্রতিটি স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল যাদের পৃথক সীমানা ও রাষ্ট্রব্যবস্থাও ছিল। বর্তমানে এর সবগুলো সুইজারল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত।

সুইজারল্যান্ডের ভূগোল

উপগ্রহ থেকে তোলা সুইজারল্যান্ডের ছবি; আল্পস পর্বতমালা, কন্সটান্স হ্রদ ও জেনেভা হ্রদ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে

সুইজারল্যান্ড পশ্চিম ইউরোপের মধ্যভাগে অবস্থিত। এর উত্তরে জার্মানি, পূর্বে অস্ট্রিয়া ও লিশটেনষ্টাইন, দক্ষিণে ইতালি এবং পশ্চিমে ফ্রান্স। সুইজারল্যান্ড একটি ক্ষুদ্র পর্বতময় দেশ। এটি কেন্দ্রীয় আল্পস পর্বতমালা এবং উত্তরাঞ্চলীয় প্রাক-আল্পস পর্বতমালার কিয়দংশ নিয়ে গঠিত। এখানে পর্বত, পাহাড়, নদী ও হ্রদের বিচিত্র সমাহার ঘটেছে। দেশটির আয়তন ৪১,২৮৫ বর্গকিলোমিটার এবং এটি উত্তর-দক্ষিণে ২২০ কিলোমিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৩৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ। দক্ষিণের মাগগিওরে হ্রদের তীরে সমুদ্র সমতল থেকে মাত্র ১৯২ মিটার উঁচুতে রয়েছে পাইন অরণ্যের সারি। অন্যদিকে সেখান থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ৪০০০ মিটারেরও বেশি উঁচু ৪৮টি বরফাবৃত পর্বতশৃঙ্গ। সুইজারল্যান্ডের তিনটি প্রধান ভৌগোলিক অঞ্চলে ভাগ করা যায়---জুরা, সুইজারল্যান্ডীয় মালভূমি এবং আল্পস পর্বতমালা।

 সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে উঁচু পর্বতের নাম মন্টি রোজা গ্রীষ্মকালে গরম আর আদ্র থাকে। এই সময় পর্যায়ক্রমিকভাবে বৃষ্টি হয়। যার ফলে চারণভূমি আর গোচারণভূমির উপকার হয়। শীতকালে পর্বতগুলোতে বিকল্প রোদ্রের সাথে বরফ থাকে, যখন নিচের এলাকাজুড়ে মেঘলা আর কুয়াশার প্রবণতা দেখা যায়।

সুইজারল্যান্ডের অর্থনীতি

সুইজারল্যান্ডের অর্থনীতি পৃথিবীর অন্যতম স্থিতিশীল অর্থনীতি। দীর্ঘমেয়াদি মুদ্রা নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দেশটির অর্থনৈতিক নীতির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য, যা সুইজারল্যান্ডকে বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটী আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে বিনিয়োগকারীদের পরিচিত করে তুলেছে। বৈদেশিক বিনিয়োগের উপর সুইজারল্যান্ডের অর্থনীতির নির্ভরতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। শিল্প ও বাণিজ্য সুইজারল্যান্ডের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। বিশ্বের সর্বোচ্চ মাথা-পিছু আয়ের দেশগুলোর মধ্যে সুইজারল্যান্ড অন্যতম। সুইজারল্যান্ডে বেকারত্বের হার কম। এছাড়া দেশটির সেবা খাত ক্রমেই অর্থনীতির একটি বড় অংশ হিসেবে আবির্ভুত হচ্ছে।

সুইজারল্যান্ডের মানুষ

সাধু গলের মঠ , সেন্ট গলেন, সুইজারল্যান্ড

সুইজারল্যান্ডের জনসংখ্যা ৮ মিলিয়নের বেশি। রোমান ক্যাথলিক এখানে বেশি চর্চা করা ধর্ম। জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ মানুষ রোমান ক্যাথলিক ধর্মের চর্চা করে। বাকিরা মুসলমান, সনাতন খ্রিষ্টান, এবং ইহুদীরা নিজ নিজ ধর্ম চর্চা করে।

সুইজারল্যান্ড বহুভাষী রাষ্ট্র এবং এখানকার চারটি রাষ্ট্র ভাষা রয়েছে: জার্মান, ফরাসি, ইতালীয় এবং রোমানীয়। বাকিরা স্পেনীয়, পর্তুগিজ আর তুর্কীয় ভাষায় কথা বলে। সুইজারল্যান্ডের শিক্ষার হার ১০০ শতাংশ। ৫ থেকে ১৬ বছর বয়সে শিক্ষা বাধ্যতামূলক।

অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর মমত সসুইজারল্যান্ড ফুটবল ভক্ত এবং বিশ্বব্যাপী জাতীয় দল সমর্থন পায়। অনেক সুইজ বরফ হকির ভক্ত। গত কিছু বছরে রোগার ফেডেরের আরর মার্টিনা হাইনগিসের মত বেশকিছু টেনিস খেলয়াড় অনেকবার একক পর্যায়ে গ্রান্ড স্যালাম চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। বর্তমান বিশ্বের সেরা আইস স্কেটার মমধ্যে একজন হলেন সুইজ স্টেফানে ল্যামবিয়েল। সুইজারল্যান্ড সফল সেইলিং টিম আলিনঘির বাড়ি। এছাড়া অন্যান্য যেসকল খেলায় সুইজারল্যান্ড সফলতা পেয়েছে তার মধ্যে ফেনসিং, হোয়াইট ওয়াটার স্যালম, বরফের হকি, সমুদ্র সৈকতের ভলিবল।


সুইজারল্যান্ডের দর্শনীয় স্থান

পর্যটকরা সুইজারল্যান্ডের প্রকৃতি আর প্রাকৃতিক ভূদৃশ্যের জন্য আকৃষ্ট হয়। এছাড়া স্কিইং আর পর্বত ভ্রমণের জন্য এখানে অনেক পর্যটক আসে। এছাড়া সুইজারল্যান্ড আর তলতার প্রতিবেশী দেশগুলোর কর পার্থক্যের জন্য কেনাকাটার ভ্রমণের স্থান। বিশ্বের অন্যতম অর্থসংস্থান হওয়ায় এখানে বহু ভ্রমণকারী ব্যবসার জন্য আসে। সুইজারল্যান্ডে বার্নের পুরাতন শহর, সাধু গলের মঠ এবং এবং মন্টি স্যান জিওরজিও সহ ১১টি ইউনেস্কো ঐতিহ্যবাহী স্থান রয়েছে।

সুইজারল্যান্ড


সুইজারল্যান্ডের জাতীয় পতাকা
পতাকা
সুইজারল্যান্ডের জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
নীতিবাক্য:
"একের জন্য সব, সবের জন্য এক"
সঙ্গীত: Swiss Psalm
সুইজারল্যান্ড-এর অবস্থান (কমলা) on the European continent-এ (সাদা)
 সুইজারল্যান্ড-এর অবস্থান (কমলা)

on the European continent-এ (সাদা)

রাজধানীবের্ন (যুক্তরাষ্ট্রীয় রাজধানী)
বৃহত্তর শহরজুরিখ
সরকারি ভাষাজার্মান, ফরাসি, ইতালীয়, রোমানশ
সরকারগণতন্ত্র যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র
• যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিষদ
M. Leuenberger
P. Couchepin
S. Schmid
M. Calmy-Rey
C. Blocher
H.-R. Merz
D. Leuthard
স্বাধীনতা
• স্থাপন
১ আগস্ট ১২৯১
• বাসেল সন্ধির (১৪৯৯)
২২ সেপ্টেম্বর ১৪৯৯
• স্বীকৃতি
২৪ অক্টোবর ১৬৪৮
• পুনঃস্থাপিত
৭ আগস্ট ১৮১৫
• যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র
১২ সেপ্টেম্বর ১৮৪৮
• পানি/জল (%)
৪.২
জনসংখ্যা
• ২০০৬ আনুমানিক
৭,৫০৭,০০০
• ২০০০ আদমশুমারি
৭,২৮৮,০১০
জিডিপি (পিপিপি)২০০৫ আনুমানিক
• মোট
$২৬৪.১ বিলিয়ন
• মাথাপিছু
$৩২,৩০০ 
জিডিপি (মনোনীত)২০০৫ আনুমানিক
• মোট
$৩৬৭.৫ বিলিয়ন 
• মাথাপিছু
$৫০,৫৩২
জিনি (২০০০)৩৩.৭
মাধ্যম
এইচডিআই (২০০৬)অপরিবর্তিত ০.৯৪৭
ত্রুটি: মানব উন্নয়ন সূচক-এর মান অকার্যকর 
মুদ্রাসুইস ফ্রাংক (CHF)
সময় অঞ্চলইউটিসি+1 (CET)
• গ্রীষ্মকালীন (ডিএসটি)
ইউটিসি+2 (CEST)
কলিং কোড+৪১
ইন্টারনেট টিএলডি.ch

তথ্যসূত্র

উইকিপিডিয়া