সন্তানের জন্য কিছু পারিবারিক মূল্যবোধ শিক্ষা ও উপদেশ!

সন্তানের-জন্য-কিছু-পারিবারিক-মূল্যবোধ-শিক্ষা-ও-উপদেশ
অনলাইন থেকে সংগৃহিত ছবি

সন্তানের জন্য কিছু পারিবারিক মূল্যবোধ শিক্ষা ও উপদেশ

বাবাকে এক সন্তানের জিজ্ঞাসাঃ-
  • বাবা, সফল জীবন কাকে বলে?
বাবা (সরাসরি উত্তর না দিয়ে) বললেনঃ-
  • আমার সাথে চলো, আজ ঘুড়ি উড়াবো। তখন বলবো।
বাবা ঘুড়ি ওড়ানো শুরু করলেন। সন্তান মনযোগ দিয়ে দেখছে। আকাশে ঘুড়ি বেশ কিছু ওপরে উঠার পর বাবা বললেনঃ-
  • এই দেখো ঘুড়িটা অতো উচুতেও কেমন বাতাসে ভেসে আছে। তোমার কি মনে হয়না, এই সূতার টানের কারণে ঘুড়িটা আরোও উপরে যেতে পারছেনা?
সন্তানঃ-
  • তা ঠিক, সূতো না থাকলে ওটা আরও উপরে যেতে পারতো!
বাবা আলগোছে সূতোটা কেটে দিলেন। ঘুড়িটা সূতার টান মুক্ত হয়েই প্রথমে কিছুটা উপরে উঠে গেল। কিন্তু একটু পরেই নিচের দিকে নামতে নামতে অদৃশ্য হয়ে গেল।
এবার বাবা ছেলেকে জীবনের দর্শন শুনাচ্ছেন-
  • "শোনো, জীবনে আমরা যে উচ্চতায় বা পর্যায়ে আছি বা থাকি; সেখান থেকে প্রায় মনে হয় ঘুড়ির সূতার মত কিছু কিছু বন্ধন আমাদের আরও উপরে যেতে বাধা দেয়। 
যেমনঃ-
  • ঘর,
  • মা-বাবা,
  • পরিবার,
  • অনুশাসন,
  • সন্তান ইত্যাদি।
আর আমরাও সেইসব বাঁধন থেকে কখনো কখনো মুক্ত হতে চাই। বাস্তবে ঐ বন্ধনগুলোই আমাদের উঁচুতে টিকিয়ে রাখে, স্থির রাখে, নিচে পড়ে যেতে দেয় না। ঐ বন্ধন না থাকলে আমরা হয়তো ক্ষণিকের জন্য কিছুটা উপরে যেতে পারি, কিন্তু অল্পসময়েই আমাদেরও পতন হবে ঐ বিনে সূতোর ঘুড়ির মতই!
জীবনে তুমি যদি উঁচুতে টিকে থাকতে চাও, তবে কখনোই ঐ বন্ধন ছিঁড়বে না। সুতা আর ঘুড়ির মিলিত বন্ধন যেমন আকাশে ঘুড়িকে দেয় ভারসাম্য; তেমনি সামাজিক, পারিবারিক বন্ধনও আমাদের জীবনের উচ্চতায় টিকে থাকার ভারসাম্য দেয়। আর এটাই প্রকৃত সফল জীবন।"
  • জীবন, ভাগ্য এবং দুর্ঘটনার কোন নিশ্চয়তা নেই, কেউ জানে না সে কতদিন বাঁচবে।
  • আমি তোমার বাবা, যদি আমি তোমাকে এই কথা না বলি, অন্য কেউ বলবে না।
  • যা লিখলাম, তা আমার নিজের ব্যক্তিগত তিক্ত অভিজ্ঞতা- এটা হয়তো তোমাকে অনেক অপ্রয়োজনীয় কষ্ট পাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে।

এগুলো জীবনে চলার পথে মনে রাখার চেষ্টা কোরোঃ
  • যারা তোমার প্রতি সদয় ছিল না, তাঁদের উপর অসন্তোষ পুষে রেখোনা। কারন, তোমার মা এবং আমি ছাড়া, তোমার প্রতি সুবিচার করা কারো দায়িত্বের মধ্যে পড়েনা। আর যারা তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করেছে - তোমার উচিত সেটার সঠিক মূল্যায়ন করা এবং কৃতজ্ঞ থাকা। তবে তোমার সতর্ক থাকতে হবে এজন্য যে, প্রতিটি মানুষেরই প্রতি পদক্ষেপের নিজ নিজ উদ্দেশ্য থাকতে পারে। একজন মানুষ আজ তোমার সাথে ভালো- তার মানে এই নয় যে সে সবসময়ই ভালো থাকবে। কাজেই খুব দ্রুত কাউকে প্রকৃত বন্ধু ভেবোনা।
  • জীবনে কিছুই কিংবা কেউই "অপরিহার্য" নয়, যা তোমার পেতেই হবে। একবার যখন তুমি এ কথাটির গভীরতা অনুধাবন করবে, তখন জীবনের পথ চলা অনেক সহজ হবে - বিশেষ করে যখন বহুল প্রত্যাশিত কিছু হারাবে, কিংবা তোমার তথাকথিত আত্মীয়-স্বজনকে তোমার পাশে পাবেনা। 
  • জীবন সংক্ষিপ্ত।আজ তুমি জীবনকে অবহেলা করলে, কাল জীবন তোমাকে ছেড়ে চলে যাবে। কাজেই জীবনকে তুমি যতো তাড়াতাড়ি মূল্যায়ন করতে শিখবে, ততোই বেশী উপভোগ করতে পারবে। 
  • ভালবাসা একটি ক্ষণস্থায়ী অনুভূতি ছাড়া কিছুই নয়। মানুষের মেজাজ আর সময়ের সাথে সাথে এই অনুভূতি বিবর্ণ হবে। যদি তোমার তথাকথিত কাছের মানুষ তোমাকে ছেড়ে চলে যায়, ধৈর্য ধরো, সময় তোমার সব ব্যথা-বিষন্নতা কে ধুয়ে-মুছে দেবে। কখনো প্রেম-ভালবাসার মিষ্টতা এবং সৌন্দর্যকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না, আবার ভালবাসা হারিয়ে বিষণ্ণতায়ও অতিরঞ্জিত হবে না।
  • অনেক সফল লোক আছেন যাদের হয়তো উচ্চশিক্ষা ছিলনা- এর অর্থ এই নয় যে তুমিও কঠোর পরিশ্রম বা শিক্ষালাভ ছাড়াই সফল হতে পারবে! তুমি যতোটুকু জ্ঞানই অর্জন করোনা কেন, তাই হলো তোমার জীবনের অস্ত্র। কেউ ছেঁড়া কাঁথা থেকে লাখ টাকার অধিকারী হতেই পারে, তবে এজন্য তাকে অবশ্যই পরিশ্রম করতে হবে।
  • আমি আশা করি না যে, আমার বার্ধক্যে তুমি আমাকে আর্থিক সহায়তা দিবে। আবার আমিও তোমার সারাজীবন ধরে তোমাকে অর্থ সহায়তা দিয়ে যাবনা। যখনি তুমি প্রাপ্তবয়স্ক হবে, তখনি বাবা হিসেবে আমার অর্থ-সহায়তা দেবার দিন শেষ। তারপর, তোমাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে- তুমি কি পাবলিক পরিবহনে যাতায়াত করবে, নাকি নিজস্ব লিমুজিন হাঁকাবে; গরীব থাকবে নাকি ধনী হবে। 
  • তুমি তোমার কথার মর্যাদা রাখবে, কিন্তু অন্যদের কাছে তা আশা করোনা। মানুষের সাথে ভালো আচরন করবে, তবে অন্যরাও তোমার সাথে ভালো থাকবে- তা প্রত্যাশা করবেনা। যদি তুমি এটি না বুঝতে পারো, তবে শুধু অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রণাই পাবে। 
  • আমি অনেক বছর ধরে লটারি কিনেছি, কিন্তু কখনও কোন পুরষ্কার পাইনি। তার মানে হলো এই যে- যদি তুমি সমৃদ্ধি চাও তবে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। বিনামূল্যে কোথাও কিছু জুটবে না। 
  • তোমার সাথে আমি কতোটা সময় থাকবো- সেটা কোন ব্যাপার না। বরং চলো আমরা আমাদের একসাথে কাটানো মুহুর্তগুলো উপভোগ করি -মূল্যায়ন করি। 

একজন আদর্শ বাবার সন্তানকে দেওয়া সেরা উপদেশঃ
  • কখনও মানুষকে ছোট করে দেখবে না, এতে তুমি ছোট হয়ে যাবে। মনে রেখো সবাই আল্লাহর বান্দা।
  • বাসায় কাজের মহিলাকে বুয়া বলে ডেকো না। মনে রেখো তিনি কাহারও বোন বা কাহারও মা। তাদেরকে আপা বলে ডেকো।
  • পড়াশুনা করে জীবনে উন্নতি করো কিন্তু কাউকে লাথি মেরে বা ক্ষতি করে উপরে উঠার চেষ্টা করো না।
  • পথে কাহাকে সাহায্য করে পিছনে ফিরে চেয়ো না, সে লজ্জা পেতে পারে।
  • সবসময় মানুষকে উপকার বা দেয়ার চেষ্টা করবে। মনে রাখবে দানকারীর হাত সর্বদা উপরেই থাকে।
  • এমন কিছু করো না যার জন্য তোমার এবং তোমার পরিবারের উপর কেউ আঙুল উঁচু করে কথা বলে।
  • পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্ব এড়িয়ে যেয়ো না। পিতা মাতার সেবা করবে। আত্বীয়স্বজন এবং প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্ক রাখবে।
  • তোমার কি আছে তোমার গায়ে লিখা নেই, কিন্তু তোমার মুখের ব্যবহার আছে, মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে।
  • কখনও মায়ের কথা শুনে বউকে এবং স্ত্রী এর কথা শুনে মাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিও না।। তাদের কাউকে কখনোই ফেলতে পারবে না।
  • যখন রাস্তায় হাঁটবে দেখে হাটবে, পথে ঘাটে কাউকে কষ্ট দিও না। ঝগড়া বিবাদ থেকে বিরত থাকবে।
  • কারো বাসায় নিমন্ত্রণ খেতে গেলেও বাসায় এক মুঠো ভাত খেয়ে যাবে। যাতে কারও বাড়ির ভাতের অপেক্ষায় ক্ষিধের জ্বালায় রাগান্বিত হতে না হয় ।
  • কারো বাসার খাবার নিয়ে সমালোচনা করবে না, কেহই খাবার অস্বাদ করে রান্না করেনা। সবাই নিজের ভালোটাই পরিবেশন করে।
  • বড়দের বা মুরুব্বিদের মাঝে তোমার চেয়ারটা বরাদ্দ নেই, আছে ছোটদের মাঝে সে দিকে খেয়াল রাখবে।
  • বড় বা ধনী হওয়ার প্রতিযোগিতা করবে না, ভাল মানুষ হবার চেষ্টা করবে। তবেই জীবনে অনেক বড় হতে পারবে।
  • শ্বশুড় কিংবা শাশুড়িকে এতটা সম্মান দিয়ো যাতে তার মেয়েকে তোমার বাড়ি পাঠানোর জন্য উতলা থাকে।
  • বাইক কখনও জোরে চালিও না, তাতে তোমার কলিজার কাপুনি বেড়ে যেতে না পারে, তবে রাস্তার পাশে থাকা মানুষটার কাঁপুনি বেড়ে যেতে পারে।
  • দেশ ও জাতির ক্ষতি হয় এমন কাজে অংশ নিওনা। মানুষ ও মানবতার জন্য কাজ করবে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে।