অভিবাসী চায় বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশটি

ফিনল্যান্ডকে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ বলা হয়। উন্নত জীবনমানের কারণে তীব্র শ্রমশক্তির ঘাটতি দেখা দিয়েছে সবার কাছে খুবই আকর্ষণীয় দেশ ফিনল্যান্ডে। অভিবাসী কর্মীর দরকার ।

অভিবাসী-চায়-বিশ্বের-সবচেয়ে-সুখী-দেশটিপ্রতীকী ছবি

ফিনল্যান্ড এখন কর্মক্ষম অভিবাসী দরকার, যা অস্বীকার করার উপায় নেই, ফিনল্যান্ডের স্থানীয় নিয়োগ সংস্থা ট্যালেন্টেড সলিউশনের কর্মকর্তা সাকু তিহভরেনেন বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন। বয়স্ক মানুষের সংখ্যা ব্যাপক বেড়ে যাচ্ছে দেশটিতে। সেই ঘাটতি পূরণের জন্য কর্মক্ষম মানুষ দরকার।

ইউরোপের অনেকে দেশেই জন্মহার বেশ কম। আর এর প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়েছে ফিনল্যান্ডে ।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, ফিনল্যান্ডে কাজ করার মতো বয়স্ক প্রতি ১০০ জন মানুষের মধ্যে ৬৫ ঊর্ধ্ব মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪০ জন। বয়স্ক জনগোষ্ঠীর হিসেবে যা জাপানের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

জনসেবা ও ক্রমবর্ধমান পেনশন ঘাটতি মেটাতে দেশটিতে অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা দ্বিগুণ করা প্রয়োজন, ৫৫ লাখ জনসংখ্যার দেশটির সরকার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে।

সুখী দেশের শীর্ষে থাকা ফিনল্যান্ড বিশ্বের অভিবাসীদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় জীবনযাত্রার মান, স্বাধীনতা, লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি স্কোর নিয়ে সুখী দেশের শীর্ষে থাকা ফিনল্যান্ড। দেশটিতে দুর্নীতি, অপরাধ এবং দূষণ খুবই নগণ্য।

অভিবাসী বিরোধী মনোভাব ও বাইরে থেকে কর্মী নেওয়ার অনীহা একই রকমের পশ্চিমা ইউরোপের দেশগুলোতে ।

বছরের পর বছর নীরব থাকার পর দেশটির সরকার এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মক্ষম জনশক্তির প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছে,
একাডেমি অব ফিনল্যান্ডের রিসার্চ ফেলো চার্লস ম্যাথিস বলেছেন।

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ফিনল্যান্ডকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে ‌‘ট্যালেন্ট বুস্ট’ নামের একটি সরকারি কর্মসূচিতে বিশেষজ্ঞ পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন ম্যাথিস। স্থানীয় নিয়োগ প্রকল্পের মাধ্যমে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে ট্যালেন্ট বুস্ট।এই কর্মসূচিতে স্পেনের স্বাস্থ্যকর্মী, স্লোভাকিয়ার সড়ক নির্মাণ শ্রমিক, রাশিয়া, ভারত এবং দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আইটি এবং সমুদ্র বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়। এই কর্মসূচি চার বছর ধরে চলছে। 

কিন্তু অতীতে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। ফিনল্যান্ডের পশ্চিমাঞ্চলীয় ভাসা শহর কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালে স্পেন থেকে ৮ জন নার্সকে নিয়োগ দিয়েছিল। কিন্তু নিয়োগের মাত্র কয়েক মাস পর সেখানকার জীবনযাপনের খরচ অত্যধিক হওয়ার পাশাপাশি ঠান্ডা আবহাওয়া এবং ভাষা জটিলতার কারণে পাঁচজন চাকরি ছেড়ে ফিরে যান।

জাতিসংঘের র‌্যাঙ্কিংয়ে গত চার বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ ফিনল্যান্ড হলেও আমরা যতটা আশা করেছিলাম এটি ততটা সহায়ক ভূমিকা পালন করেনি,বলেন হেলসিঙ্কির মেয়র জ্যান ভাভোরি। ভাভোরি বলেন, ‘আপনি যদি প্যারিস, লন্ডন, রোম বা নিউইয়র্কের রাস্তায় কাউকে থামিয়ে ফিনল্যান্ড সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে আমার মনে হয়, বেশির ভাগই বলবে তারা আমাদের সম্পর্কে জানে না।’

এই গ্রীষ্মেই শেষ হবে জ্যান ভাভোরির চার বছরের মেয়াদ। শহরের ভাবমূর্তি বাড়াতে আন্তর্জাতিক পিআর প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পৃক্ততা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। তিনি আশাবাদী কর্মক্ষম জনশক্তি সংকট কাটাতে ফিনল্যান্ড ভবিষ্যতে এশিয়ার দেশগুলো থেকে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হবে। করোনাভাইরাস মহামারি পরবর্তী অবস্থায় মানুষের চলাচল স্বাভাবিক হলে গন্তব্যের অগ্রাধিকার তালিকায় ফিনল্যান্ড জায়গা করে নেবে বলে বিশ্বাস করেন হেলসিঙ্কির এই মেয়র।