গ্রহাণুর আঘাতের কারণে পৃথিবীতে ডাইনোসর বিলুপ্তি

গ্রহাণুর আঘাতের কারণে পৃথিবীতে ডাইনোসর বিলুপ্তি


পৃথিবীর ওপর এক বিশাল গ্রহাণুর আঘাতের পরিণামে ডাইনোসররা নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল । সেকেন্ড-মিনিট-ঘন্টা ধরে ধরে একদল বিজ্ঞানী সেই ঘটনাটির বিশদ বিবরণ তৈরি করেছেন ।

এক সময় বিচরণ করতো যে অতিকায় ডাইনোসররা পৃথিবীর বুকে , আজ শুধু পাওয়া যায় তাদের হাড়গোড়। এক ভয়ংকর ঘটনার পরিণতির কারণ, এখন থেকে প্রায় ছয় কোটি ৬০ লাখ বছর আগে  তারা সবাই মারা গেছে।

পৃথিবীতে এক বিরাট আকারের গ্রহাণুর আঘাতে যে বিস্ফোরণ ও পরিবেশগত পরিবর্তন হয়েছিল সেটাই  ডাইনোসরদের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার কারণ মনে করেন গবেষকরা ।

পৃথিবীতে শুরু হয় স্তন্যপায়ী প্রাণীদের যুগ, ডাইনোসরদের বিলুপ্তির পর ।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, সেই গ্রহাণুটি ছিল ১২ কিলোমিটার চওড়া। সেটা এসে পড়েছিল মেক্সিকো উপসাগর তীরবর্তী ইউকাটান উপদ্বীপ এলাকায়।

শিলার গঠন তন্ন তন্ন করে পরীক্ষা করে দেখেছেন টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দল, সেই এলাকায় তৈরি হওয়া বিশাল জ্বালামুখের ভূপ্রকৃতি এবং সেই গ্রহাণুর আঘাতের চিহ্ন তারা খুঁজে পেয়েছেন।

গ্রহাণুর আঘাতের কারণে পৃথিবীতে ডাইনোসর বিলুপ্তি

শিল্পীর কল্পনায় ডাইনোসরদের বিচরণস্থল

এত জোরে এটি পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়েছিল যে গবেষকরা বলছেন, তাতে ২০০ কিলোমিটার চওড়া এবং কয়েক কিলোমিটার গভীর একটি গর্ত বা জ্বালামুখ তৈরি হয়েছিল। গর্তটির কিনারগুলো তার পর ভেতর দিকে ধসে পড়ে।

এর ফলে সাগরে সৃষ্টি হয়েছিল এক ভয়াবহ সুনামি। তৈরি হয়েছিল দানবাকৃতির ঢেউ।

এই গর্তটির বড় অংশই এখন আছে সমুদ্রের তলায়- তার ওপর জমেছে ৬০০ মিটার পুরু পলির আস্তরণ। মাটির ওপর যে অংশ আছে তা চুনাপাথর দিয়ে ঢাকা।

বিজ্ঞানীরা ওই এলাকাটির উপাদান পরীক্ষা করে কোন সালফার বা গন্ধকের উপস্থিতি পান নি।

কিন্তু সমুদ্রের তলদেশের ওই জায়গাটির এক তৃতীয়াংশই ছিল জিপসামের তৈরি - যার অন্যতম উপাদান সালফার।

সেই সালফার হয়তো ওই গ্রহাণুর আঘাতজনিত বিস্ফোরণে সাগরের পানির সাথে মিশে গিয়েছিল এবং তা আকাশে ছড়িয়ে পড়েছিল।

তার ফলে নাটকীয়ভাবে আবহাওয়া অত্যন্ত ঠান্ডা হয়ে যায়, এবং কোন প্রাণী বা গাছপালার বেঁচে থাকা দুরূহ হয়ে ওঠে।

একশ গিগাটন (এক গিগাটন মানে হলো ১০০ কোটি টন) সালফার বায়ুমন্ডলে মিশে যাবার ফলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চাইতে অন্তত ২৫ ডিগ্রি নিচে নেমে যায়, বিজ্ঞানীদের অন্যতম টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শন গুলিক বলছেন।

তার মানে তখন পৃথিবীর বেশির ভাগ এলাকার তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির নিচে নেমে গিয়েছিল ।

তিনি আরো বলছেন, রক্ষণশীল হিসেবে মনে করা হয় যে ওই ঘটনায় পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রায় ৩২৫ গিগাটন সালফার ছড়িয়ে গিয়েছিল।

গ্রহাণুর আঘাতের কারণে পৃথিবীতে ডাইনোসর বিলুপ্তি

ডাইনোসরের মাথার খুলি

এত ঠান্ডা আবহাওয়ায় স্তন্যপায়ী প্রাণীরা বেঁচে থাকতে পেরেছিল, কিন্তু ডাইনোসররা বাঁচতে পারে নি।

তার সম্ভাব্য কারণ ব্যাখ্যা করে যেসব তত্ত্ব আছে, তার মধ্যে এটি বিজ্ঞানীদের মধ্যে জনপ্রিয়- ডাইনোসররা কেন সহসাই পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। অধ্যাপক গুলিকের গবেষণায় এ তত্ত্ব সমর্থনে বেশ কিছু যুক্তি মিলে যাচ্ছে।