অবাক হয়েছেন শিরোনাম দেখে ? এই দুর্মূল্যের বাজারে ৫ হাজার টাকা খরচে দ্রুতগতির কম্পিউটার! হ্যাঁ, সম্ভব। মাদারবোর্ডে সাপোর্ট করে এমন যেকোনো পুরাতন কম্পিউটার ও ল্যাপটপে একটি এসএসডি বা সলিড স্টেট ড্রাইভ লাগালে পাওয়া যাবে দারুণ গতি। যার বাজার মূল্য ৫ হাজার থেকে ২৮ হাজার পর্যন্ত।
এসএসডি ড্রাইভ কিনে লাগালে আপনার পুরাতন কম্পিউটার প্রায় কোর-আই ৯ মানের সুপারফাস্ট করে তুলবে। এসএসডি ড্রাইভ বর্তমান সময়ে হার্ড ড্রাইভের বিকল্প হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মূলত উচ্চগতিতে ডাটা প্রসেসিংয়ের কারণেই এর জনপ্রিয়তা দিন দিনই বাড়ছে।
এসএসডি ব্যবহার করার কারণে কম্পিউটারের বুট টাইম সর্বনিম্ন হওয়ায় চোখের পলকেই কম্পিউটার চালু হয় এবং অন্যান্য কাজও করা যায় খুব দ্রুত।
বর্তমানে হরহামেশাই এসএসডির ব্যবহার চোখে পড়লেও এর প্রথম ব্যবহার শুরু হয়েছিল নেটবুকের দিনগুলোতে। ২০০৭ সালে OLPC XO-1 নেটবুকে ১জিবি এবং এরপর আসুস ইইই পিসিতে ২ জিবি ক্ষমতার এসএসডি ব্যবহার করা হয়েছিল।
বর্তমানে বিভিন্ন নোটবুকে এসএসডি ব্যবহারের পরিমাণ চোখে পড়ার মতো। দুই বছর আগেও যেখানে মাত্র ২০-২৫ শতাংশ নোটবুকে এসএসডি ব্যবহার করা হতো, এখন এর পরিমাণ ৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান।
যেভাবে কাজ করে এসএসডি
এসএসডি বেশ উচ্চগতিতে ডাটা পড়তে এবং প্রসেস করতে পারে। মূলত এসএসডি একটি নন-ভোলাটাইল শ্রেণির মেমোরি স্টোরেজ কম্পোনেন্ট। আরও সহজ করে বলা যাক। বর্তমান সময়ে মেমোরি স্টিক বা পেনড্রাইভ কমবেশি সকলেই ব্যবহার করছেন। সহজেই তথ্য আদানপ্রদানে এর জুড়ি নেই। এসএসডি’কে মেমোরি স্টিকের একটি আপডেটেড ভার্সন বলা যেতে পারে যাতে বাড়তি তথ্য সংরক্ষণ ক্ষমতার পাশাপাশি আছে উন্নততর প্রযুক্তি।
হার্ডডিস্কে একাধিক ডিস্কের ব্যবহার করা হয়ে থাকে তথ্য সংরক্ষণের জন্য যা প্রতি সেকেন্ডে ৫৪০০ বা ৭২০০ বার গতিতে ঘুরতে থাকে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করে। কিন্তু তথ্য সংরক্ষণের জন্য এসএসডিতে ব্যবহার করা হয় মাইক্রোচিপ। আর এজন্যই এসএসডি এতো দ্রুতগতিতে তথ্য সরবরাহ করতে সক্ষম।
সাধারণত সলিড স্টেট ড্রাইভে ন্যান্ড প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় যা এক ধরনের নন-ভোলাটাইল মেমোরি প্রযুক্তি। নন-ভোলাটাইল বলতে বোঝানো হয় যে ডিস্ক একবার বন্ধ করলেও এর তথ্য হারিয়ে যায় না যেমনটি হারায় র্যামের ক্ষেত্রে, কম্পিউটার বন্ধ করলেই অস্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা তথ্য র্যাম থেকে হারিয়ে যায়।
এসএসডির শুরুর দিকের দিনগুলোতে একটি গুজব বেশ প্রচলিত ছিল। অনেকেই বলত বছর দুয়েক পর এসএসডি থেকে সব তথ্য হারিয়ে যাবে। তবে এমন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা মোটেই নেই। এর মাধ্যমে প্রায় ২০০ বছর পর্যন্ত খুব সহজেই তথ্য সংরক্ষণ করা যাবে।
তথ্য প্রসেস করার জন্য এসএসডিতে রয়েছে এমবেডেড প্রসেসর বা কন্ট্রোলার। এসএসডির ডাটা প্রসেসিং স্পিড কেমন হবে, তাও নির্ভর করে এই কন্ট্রোলারের উপর। যেমন- SATA 3.0 কন্ট্রোলার ব্যবহৃত একটি এসএসডি’তে প্রতি সেকেন্ডে ৫৫০ মেগাবাইট পর্যন্ত ডাটা ট্রান্সফার স্পিড পাওয়া যাবে যা হার্ড ডিস্কের তুলনায় বহুগুণ বেশি।
তবে মজার ব্যাপার হলো, রিড কিংবা রাইট স্পিড বেশি হলেও সলিড স্টেট ড্রাইভের ওভাররাইট স্পিড খুবই কম।
এসএসডি’র সুবিধা-অসুবিধা
বলতে গেলে এসএসডির সুবিধাই বেশি। এর সবচেয়ে বড় সুবিধাই হলো গতি। এছাড়া কম বিদ্যুৎ ব্যবহার, হার্ড ডিস্কের মতো নয়েজ না থাকাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তবে কিছু অসুবিধা যে নেই তা একেবারেই বলা যাবে না। অধিক তথ্য সংরক্ষণের জন্য সাধারণত ৪ টেরাবাইট পর্যন্ত এসএসডি পাওয়া যায় তবে তাও খুব একটা সহজলভ্য নয়। হার্ড ড্রাইভের তুলনায় এর স্থায়িত্বও অনেক বেশি।
হার্ডডিস্কের তুলনায় এসএসডি আকারে খুবই ছোট। এটি ১.৮, ২.৫ বা ৩.৫ ইঞ্চি আকারের হতে পারে। সাধারণত মাদারবোর্ডের সাথে এসএসডি যুক্ত করার জন্য SATA ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে পিসিআই এক্সপ্রেস স্লটেও এটি যুক্ত করার সুবিধা রয়েছে।
দরদাম
বর্তমানে সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য বাজারে ৪ টেরাবাইট পর্যন্ত এসএসডি রয়েছে। তবে বাংলাদেশের বাজারে মোটামুটি ১২০ জিবি থেকে ৯৬০ জিবি পর্যন্ত এসএসডি বেশ সহজলভ্য। ১২০ জিবি ধারণ ক্ষমতার বিভিন্ন ব্রান্ডের এসএসডির মূল্য ৫ হাজার থেকে ৫ হাজার ৭০০ টাকা। ২৪০ জিবি এসএসডির মূল্য ব্রান্ডভেদে ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত।
এছাড়া ট্রান্সসেন্ডের ২৫৬ জিবি এসএসডি পাওয়া যাবে ৮৭০০ টাকায়। ৪৮০ জিবি এসএসডি কেনা যাবে ১৫ হাজার থেকে শুরু করে ১৬ হাজার টাকার মধ্যে। এছাড়া কোরসেয়ার ব্রান্ডের ৯৬০ জিবি এসএসডি কেনা যাবে ২৮ হাজার ৫০০ টাকায়। রাজধানীসহ দেশের যেকোনো জেলার কম্পিউটার মার্কেটে এই ড্রাইভ পাওয়া যায়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন