কোথায় যেন হারিয়ে গেল সেই শৈশব, সেই চাঞ্চল্যতা

 কোথায় যেন হারিয়ে গেল সেই শৈশব, সেই চাঞ্চল্যতা

ক্লাস ওয়ান (২০০৭ সাল)
প্রথমদিন চাচার সাথে ৩জন গ্রামের অনেক কাছের স্কুলে গেলাম ভর্তি হতে। আমি, আর আমার দুইজন কাজিন। হেড ম্যাম আমাকে আর আমার এক কাজিনকে ভর্তি করে নিলো না, কারণ হচ্ছে আমরা মাথার উপর দিয়ে কান ধরতে পারিনি। পারবোই বা কীভাবে? তখন আমার বয়স ৫ বছর ১০ মাস। আর কাজিন আমার চেয়ে ১ মাসের বড়। আর ৬ বছরের নিচে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করানো হয় না। আর সার্টিফিকেট হিসেবে তখন আমার বয়স ছিল ৫ বছর ১ মাস। আরেকজনের তখন ৬ বছর হয়েছিল এবং কানও ধরতে পারছিল। ফলে তাকে ভর্তি করানো হল, আর আমাদের মন খারাপ করে বাসায় ফিরে আসতে হল।
পরেরদিন আবার গেলাম। এবার গেলাম আমার আরেক কাজিনের সাথে। এবার আর কান ধরতে হল না। অন্য একজন ম্যাম আমাদের ভর্তি করিয়ে নিল। এভাবেই শুরু হয়েছিল স্কুল জীবন।


স্কুলে যেতাম স্কুল খোলার আগে, উদ্দেশ্য ১ম বেঞ্চে বসতে হবে। গিয়ে রুমের তালা ধরে অথবা দরজার সাথে ঠেস দিয়ে ব্যাগ হাতে নিয়ে দারাতাম। কোনোভাবেই ১ম বেঞ্চ হারানো যাবে না। এটা ক্লাস ৩/৪ পর্যন্ত চলেছিল। আর যদি রুমের জানালা খোলা থাকত তাহলে আর আটকাই কে। জানালা দিয়ে ব্যাগ অথবা বই বেঞ্চে রাখতাম। এভাবেই চলেছে বেঞ্চ ধরার প্রতিযোগিতা। এই ১ম বেঞ্চে বসার ধারাবাহিকতা এখনও আছে। মনে হয় যেন ১ম বেঞ্চে না বসলে ক্লাস হজম হয় না। তারপর ক্লাস করতাম। ক্লাস শেষে পিটি করতে আবার ঠেলাঠেলি করে বের হয়ে লাইনে দাঁড়াতাম। বড় ভাই বা আপুরা ছোট থেকে বড় ক্রমানুসারে লাইন করে দিতেন। লাইন বাঁকা হলে সোজা করে দিতেন। এভাবেই পিটি করতাম, জোরে জোরে শপথ আর জাতীয় সংগীত গাওয়ার চেষ্টা করতাম। বেশ কয়েক ধরনের পিটি হতো। আবার পিটি শেষ করে সিঁড়িতে রাখা বই নিয়ে হইহই করতে করতে বাড়ির দিকে যাত্রা। আশপাশের সবাই বুঝতো ক্লাস ওয়ান আর টু এর বাচ্চারা যাচ্ছে। এভাবেই চলেছে ক্লাস ওয়ান।
স্কুল, খাওয়া, খেলাধুলা আর প্রতিদিন ২ টাকা নিয়ে স্কুলে যাওয়া। স্কুলে যাওয়ার সময় ১টাকার চারটি লজেন্স, ছুটি হলে আবার ১টাকার আচার বা বরইয়ের জর্দা। খেতাম, রাস্তায় ধুলো উড়িয়ে চেঁচামেচি করতে করতে বাড়ি যেতাম। পরনে থাকত ব্লু কালারের হাফ প্যান্ট, কলমে দাগে ভরা সাদা শার্ট,, আর একটা ব্যাগ যাতে কোনো কার্টুনের ছবি আঁকানো। সম্ভবত স্পাইডারম্যান অথবা মিনা – মিঠু।
আর আমরা চলে যাওয়ার পর যদি কেউ ওই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেত, সে এমনিতেই বুঝে যেত কিছুক্ষণ আগে এই রাস্তা দিয়ে কারা গেছে।
ক্লাস ওয়ানে কখনো ১ম হতে পারিনি। কারণ মৌখিক বেশি ছিল আর আমি মৌখিকে খুবই কাঁচা ছিলাম। তবে বার্ষিক পরীক্ষাতে ২য় হয়েছিলাম আর পুরস্কার হিসেবে একটা এক পাল্লাওয়লা হার্ডবোর্ড পেয়েছিলাম।
এভাবেই কেটে গিয়েছে স্কুলের ১ম বছর।