স্তন্যদানকারী মায়েরা কি খাবার খাবেন, কি খাবেন না!

স্তন্যদানকারী মায়েরা কি খাবার খাবেন, কি খাবেন না!


শিশুর জন্মের পর ছয় মাস পর্যন্ত বুকের দুধ ছাড়া অন্য কোনো খাবারের প্রয়োজন নেই। ছয় মাসের পর থেকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত পরিপূরক খাবারের পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধই শিশুর জন্য উৎকৃষ্ট, বিশুদ্ধ, নিরাপদ ও রোগ প্রতিরোধকারী খাদ্য। মায়ের দুধে শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব খাদ্য উপাদান থাকে, যা মায়ের প্রতিদিনের খাবার অথবা শরীরে সঞ্চিত পুষ্টি উপাদান থেকে সরবরাহ হয়ে থাকে। তাই এ সময় মাকে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে একটু বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত। কারণ, ল্যাকটোজ, ক্যালসিয়াম, জিংক, আয়রন, কপার, ফোলেট ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান মায়ের শরীরে ঘাটতি করে হলেও বুকের দুধে সরবরাহ হতে থাকে। কিন্তু মায়ের শরীরে যদি আয়োডিন, ভিটামিন এ, সেলেনিয়াম ও বি–ভিটামিনগুলোর ঘাটতি থাকে, তাহলে বুকের দুধেও এগুলোর অভাব দেখা দেয়। আবার কিছু খাবার আছে যা মায়েদের এড়িয়ে চলতে হয়,পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি। এই খাবারগুলো খাওয়ার পর বাচ্চারা অনেক সময় দেখা গেছে মায়ের দুধ খেতে চায় না অথবা দুধ খেলে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তাই সর্বক্ষণ মায়েদের সচেতন থাকতে হয়। এমন কোন খাবার খাওয়া যাবে না যাতে বাচ্চাদের দুধ খাওয়ানোর সময় বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়ে।

কাজেই স্তন্যদানকারী মায়ের অপুষ্টি রোধে এবং বুকের দুধের গুণগত মান অক্ষুণ্ণ রাখতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর দিকে নজর দেওয়া জরুরিঃ

যে খাবারগুলো বেশি বেশি খেতে হবে-
  • তরলজাতীয় খাবারঃ এক থেকে দুই গ্লাস পানি বা তরলজাতীয় খাবার (দুধ, স্যুপ, ফলের রস, রসাল ফল ও পানিসমৃদ্ধ সবজি) খান, তাহলে দুধ বেশি নিঃসরিত হয়।
  • প্রোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিডঃ প্রতিদিন দুধ বা দুগ্ধজাতীয় খাবার, ডিম, মাছ, মাংস, ডাল বা ডালজাতীয় খাবার খাবেন, যাতে ভালো মানের প্রোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়ামএবং বি–ভিটামিনগুলো ছাড়াও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়।
  • ভিটামিন ডিঃ ভিটামিন ডি’র জন্য মা ও শিশু দুজনই প্রতিদিন কিছুক্ষণ সূর্যের আলোয় থাকবেন।
  • শাকসবজি এবং মৌসুমি ফলঃ প্রতিদিন গাঢ় সবুজ ও রঙিন শাকসবজি এবং মৌসুমি ফল খেলে প্রচুর আঁশ ছাড়াও ক্যালসিয়াম, আয়রন, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন সি, ফোলেট ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট পাওয়া যাবে।
  • আয়োডিনযুক্ত লবণঃ শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ অব্যাহত রাখতে আয়োডিনযুক্ত লবণ খেতে হবে।

যে খাবারগুলো এরিয়ে চলতে হবে-
  • ভাজা ও মসলাযুক্তঃ অতিরিক্ত তেলে ভাজা ও মসলাযুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো।
  • সাপ্লিমেন্ট ও ওষুধঃ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের সাপ্লিমেন্ট ও ওষুধ সেবন করবেন না।
  • লেবু জাতীয় ফলঃ এই সময় লেবু জাতীয় সকল ফল এড়িয়ে চলা উচিত। এই জাতীয় ফলে অ্যাসিড থাকে যা শিশুর বুক জ্বালা পোড়া, পেট ব্যথার কারণ হতে পারে। এমনকি শিশুর শরীরে র‍্যাশ বা অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। আপনি লেবুর পরিবর্তে অন্য ভিটামিন সি এর উৎস যেমন পেঁপে আম, খেতে পারেন।
  • কফিঃ আপনি যখন কফি বা চা পান করেন তখন ক্যাফিনের কিছু অংশ দুধের সাথে মিশে যায়। ছোট শিশুদের বড়দের মত ক্যাফিন শোষন করার ক্ষমতা থাকে না। ফলে ওদের পেটে ব্যথা, বুক জ্বালাপোড়া, অনিদ্রা দেখা দিতে পারে। তাই বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • তামাক জাতীয় ধুমপানঃ ই অভ্যাস ত্যাগ করুন। অনিদ্রা দেখা দিতে পারে। তাই বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় তামাক জাতীয়  ‍ধুমপান  থেকে বিরত থাকুন।
  • চকলেটঃ এই সময় আপনার প্রিয় চকলেট খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। চকলেট বিশেষ করে ডার্ক চকলেটে ক্যাফিন থাকে যা আপনার শিশুর স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। চকলেট খাওয়ার পর দুধ খেলে আপনার বাচ্চা যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে বা ত্বকে র‍্যাশ দেখা দেয় তবে চকলেট খাওয়া বন্ধ করে দিন
  • ব্রকোলিঃ ব্রকোলির পুষ্টিগুণ অনেক, কিন্তু বাচ্চা দুধ খাওয়ানোর সময় ব্রকোলি, ফুলকপি জাতীয় গ্যাস সৃষ্টিকারী সবজি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এই খাবারগুলো পেটে গ্যাস সৃষ্টি করে থাকে যা বাচ্চার ক্ষতি করে।
  • রসুনঃ আপনার যদি কাঁচা রসুন বা রসুনের খাবার খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তবে আজই এই অভ্যাস ত্যাগ করুন। রসুনের গন্ধ বুকের দুধের মধ্যে আসে যা আপনার বাচ্চা পছন্দ নাও করতে পারে।
  • কিছু মাছঃ মাছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। কিন্তু কিছু মাছ যেমন টুনা মাছ, আঁশযুক্ত মাছ খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
খাদ্যবাহিত রোগের সংক্রমণ এড়াতে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। দুধ, ডিম, মাছ, মাংসের ক্ষেত্রে ভালো করে রান্না করতে হবে।