বিপন্ন কালচে-বাদামি মুখের ওপর সাদা গোঁফওয়ালা বাঁশভাল্লুক

বিপন্ন-কালচে-বাদামি-মুখের-ওপর-সাদা-গোঁফওয়ালা-বাঁশভালুক
ছবি: আ ন ম আমিনুর রহমানঅধ্যাপক, বশেমুরকৃবি, গাজীপুর

কালচে-বাদামি মুখের ওপর সাদা গোঁফওয়ালা প্রাণীটি বিশ্বের অনেক চিড়িয়াখানা এবং সাফারি পার্কে দেখা যায়। দাঁত-মুখ খিঁচানো অবস্থায় হিংস্র দেখালেও আদতে কিন্তু প্রাণীটি একেবারেই নিরীহ। বনের মধ্যে চিড়িয়াখানার বাইরে এই নিশাচর এই প্রাণীকে দেখার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। আজ পর্যন্ত কোন মানুষের উপর হামলার কথা শুনা যায়নি।

সাদা গোঁফওয়ালা পশু এদেশের সবচেয়ে বিপন্ন এবং বিরল স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে একটি, বাঁশ ভাল্লুক। গাছটি ফুয়া, গেচো ভাল্লুক বা ভামাকর ভাল্লুক নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম বিন্টুরং, বিয়ারক্যাট বা এশিয়ান বিয়ারক্যাট।

যাইহোক, যদিও তারা নাম দ্বারা ভাল্লুক, তারা বাঁশভাল্লুক পরিবারের প্রাণী নয়। বরং খাটাশ, বাগডাশ বা গন্ধগোকুলদের সঙ্গে একই গোত্র ভাইভেরিডির অন্তর্ভুক্ত। বাঁশ ভাল্লুকের বৈজ্ঞানিক নাম Arctictis binturong। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটান, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং ফিলিপাইনে এদের দেখা যায়।

এরা গন্ধগোকুল গাছের একটি প্রজাতি, যা দেখতে অনেকটা ছোট ভাল্লুকের মতো। শরীরের দৈর্ঘ্য ৮৫-৯০ সেমি এবং লেজ প্রায় ৬০ সেমি। ওজন ৯-২০ কেজি। দেহের লোম রুক্ষ ও অমসৃণ কালো; তাতে থাকে আংশিক সাদা ও হালকা হলুদের মিশেল। কানের কিনারা, ভ্রু ও গোঁফ সাদা।

চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ঘন চিরহরিৎ বনাঞ্চল এবং বাঁশের বনে কয়েকটি এলাকায় এদের দেখা যায়। নিশাচর, নিশাচর এবং উপকূলীয় প্রাণী সাধারণত একা ঘোরাফেরা করে। দিনের বেলা, তিনি সাধারণত একটি গাছ খনন করার সময় ঘুমান। রাতে খাবারের খোঁজে বের হয়। এই সর্বভুক প্রাণীর খাদ্যের মধ্যে রয়েছে ছোট মেরুদণ্ডী প্রাণী, অমেরুদণ্ডী প্রাণী, পাখি, মাছ, পোকামাকড়, ফল (বিশেষ করে বাদুড়) ইত্যাদি।

তারা বছরের যে কোন সময় প্রজনন করতে পারে। তবে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বেশি। গর্ভধারণের ৯০-৯২ দিন পর স্ত্রী দুই থেকে ছয় সন্তানের জন্ম দেয়। শিশুরা ২৮-৩০ মাসে পরিপক্ক হয়। 

আ ন ম আমিনুর রহমানঅধ্যাপক, বশেমুরকৃবি, গাজীপুর বলেন- এদের আয়ুষ্কাল বুনো পরিবেশে প্রায় ১৮ বছর ও আবদ্ধাবস্থায় ২৫ বছর। মানুষ ওকে আঘাত করেছে বারবার এবং অহেতুক। কখনোবা করে বন্দী। আর বন্দিদশা থেকে উদ্ধার করতে পারলে স্থান হয় চিড়িয়াখানা বা সাফারি পার্কে। যেমনভাবে অপরাধীদের জায়গা হয় জেলহাজতে। যাদের থাকার কথা ছিল মুক্ত-স্বাধীন পরিবেশে, তারা আজ কোন অপরাধে হাজতবাস করবে? 

আমাদের শখের খেসারত কেন তাদের দিতে হবে? এত বছর পর এদের উদ্ধার করেই–বা লাভ কী? আসলে ‘বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে’ এই প্রবাদবাক্যের সত্যিকারের অর্থ মানুষ যত দিন না বুঝবে, তত দিন বন্য প্রাণী সংরক্ষণের কিছুই হবে না। মানুষ কি আসলে বন্য প্রাণী ও প্রকৃতির সংরক্ষণ চায়? দুঃখের বিষয়, এভাবে চলতে থাকলে একদিন এ দেশে আর একটি বন্য প্রাণীও অবশিষ্ট থাকবে না।