ডেঙ্গুর রোগীর উপসর্গ এবং যেসব খাবার খাওয়ানো জরুরি

ডেঙ্গুর-রোগীর-উপসর্গ-এবং-যেসব-খাবার-খাওয়ানো-জরুরি
ছবিঃসংগৃহিত

শুধু জ্বর থেকে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না যে জ্বরটি কিসের উপসর্গ। তাই জানতে হবে ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণগুলি কি কি।

ডেঙ্গুর পাঁচটি প্রধান উপসর্গ-

জ্বরঃ ডেঙ্গুর একটি প্রধান লক্ষণ হল জ্বর। সাধারণত জ্বরের মধ্য দিয়েই ডেঙ্গু্ রোগীর প্রথম লক্ষণ প্রকাশ পায় । আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে সাধারণত ৪-৫ দিন জ্বর থাকে। এই জ্বরের মাত্রা থাকে ১০২ ডিগ্রী- ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট । দিন ও রাতে সারাক্ষণ শরীরে এই জ্বর থাকতে পারে।

ব্যথাঃ ডেঙ্গুর আরেকটি লক্ষণ হল ব্যথা। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা হয়। ডেঙ্গুর কারণে সাধারণত মাথায়, চোখের পেছনে, মাংশপেশী, শিরদাঁড়ায় তীব্র ব্যথা হয়।

র‍্যাশ ও রক্তক্ষরণঃ র‍্যাশ ও রক্তক্ষরণ ডেঙ্গুর আরেকটি লক্ষণ। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন স্থানে নানা ধরণের র‍্যাশ উঠতে পারে। পাশাপাশি কোন কোন রোগীর ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ হতে পারে।

বমি ও পাতলা পায়খানাঃ ডেঙ্গুর অন্যতম লক্ষণ আক্রান্ত ব্যক্তির বমি ও পাতলা পায়খানা হওয়া। দিনে একাধিকবার বমি ও পাতলা পায়খানা হতে পারে। অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রেই এটি হয়ে থাকে।

রক্তচাপ কমে যাওয়াঃ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত প্রায় পঞ্চাশ ভাগ রোগীর রক্তচাপ কমে যায় এবং অল্প সংখ্যক রোগীর কিডনী, ব্রেইন, হার্ট বিকল হয়ে যেতে পারে।ব্যথাঃ ডেঙ্গুর আরেকটি লক্ষণ হল ব্যথা। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা হয়। ডেঙ্গুর কারণে সাধারণত মাথায়, চোখের পেছনে, মাংশপেশী, শিরদাঁড়ায় তীব্র ব্যথা হয়।

যাদের ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি
  • যাদের আগে ডেঙ্গু জ্বর হয়েছিল।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের কম।
  • যাদের শরীরে রক্তের প্লাটিলেট কাউন্ট কম।

যেসব খাবার খাওয়ানো ডেঙ্গু রোগীকে জরুরি-

ডেঙ্গু হলে শরীর সুস্থ রাখতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরি। কারণ ডেঙ্গুতে শরীরের প্লাটিলেট কমে যেত শুরু করে। এ ছাড়াও শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা বাড়তে পারে। তাই ডেঙ্গু জ্বর হলে পুষ্টিকর খাবারের মাধ্যমে শরীরে পুষ্টি গ্রহণ আরও বাড়াতে হবে।পুষ্টিবিদদের মতে, ডেঙ্গু হলে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার দিকে খেয়াল রাখা জরুরি।

জ্বর হলে অনেকেই খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেন। এর থেকে হতে পারে পানিশূন্যতা। পাশাপাশি কমে যেতে পারে প্লাটিলেট সংখ্যা। তাই বাড়িতে কারও ডেঙ্গু জ্বর অবশ্যই কয়েকটি খাবার খাওয়ানো জরুরি।

ডালিম
ডালিমে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল। এ সময় ডালিম খেলে বাড়বে প্লেটলেটের সংখ্যা। এই উপকারী ফলটি খেলে ক্লান্তি ও অবসাদ অনুভূতিও দূর হবে।
ডাব
শারীরিক সুস্থতায় ডাবের পানি অনেক উপকারী। ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীরে তরল পদার্থের শূন্যতা থেকে সৃষ্টি হয় ডিহাইড্রেশন। তাই এ সময় বেশি করে ডাবের পানি পান করুন। এতে থাকে ইলেক্ট্রোলাইটসের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি।
কমলা
কমলা বা মালটার রসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এ দুটি উপাদান ডেঙ্গু জ্বর নিয়ন্ত্রণে উপকার করে।
কিউই
কিউই ফলেও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে এতে থাকে পটাশিয়াম। এ ফল খেলে ইলেক্ট্রোলাইট স্তর এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। সেইসঙ্গে কিউই খেলে শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার মাত্রাও বৃদ্ধি পায়।
হলুদ
রান্নাঘরের একটি উপাদান হলো হলুদ। যা চিকিৎসায় যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ডেঙ্গু জ্বর হলে এক গ্লাস দুধের সঙ্গে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে পান করুন। হলুদ দুধ খাওয়ার একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে।
ব্রোকোলি
ব্রোকোলি হলো ভিটামিন কে’র একটি ভালো উত্স। অন্যদিকে ভিটামিন কে রক্তের প্লেটলেট বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। যদি কোনো ব্যক্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন; তাহলে অবশ্যই তাকে ব্রোকোলি খাওয়াতে হবে।
পালং শাক
পালং শাকে থাকে প্রচুর পরিমাণে আইরন এবং ওমেগো-থ্রি ফ্যাটি এসিড। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকেও শক্তিশালী করেতে সহায়তা করে এই শাক। পালং শাক গ্রহণে ডেঙ্গু রোগীর প্লেটলেট দ্রুত বাড়বে।

মেথি
মেথি সবার ঘরেই নিশ্চয়ই আছে! ডেঙ্গু হলে অতিরিক্ত মাত্রার জ্বর কমাতে সাহায্য করে এই উপাদানটি। তবে মেথি গ্রহণ করার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরমার্শ করে নিতে হবে।

স্যুপ, পাতলা ঝোল
কোনোভাবেই এ সময় অতিরিক্ত তেল, মশলা দিয়ে রান্না করা কোন খাবার বা বাইরের কোন ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। মাছ বা মাংসের ঝোল না খেয়ে সিদ্ধ করে পাতলা ঝোল করে খেতে হবে।
বেশি মশলা দিয়ে রান্না করা গরু বা খাসির মাংসের চেয়ে ছোট মুরগীর সহজপাচ্য ঝোল বা স্যুপ বেশি উপকারী। কয়েক রকমের সবজি সিদ্ধ করে স্যুপ অথবা টমেটো স্যুপ, চিকেন স্যুপ, কর্ন স্যুপ খেলে অনেক সময় অরুচি কাটে আবার শরীরের পানির চাহিদাও পূরণ হয়।

ডেঙ্গু হলে যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত

তৈলাক্ত খাবার
এডেঙ্গু হলে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি তৈলাক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার পরিহার করুন। সেইসঙ্গে মসলাযুক্ত খাবারও এড়িয়ে চলতে হবে।

মসলাদার খাবার
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মসলাদার খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। মসলাদার খাবার যকৃতে অ্যাসিড সৃষ্টি করে আলসার এমনকি যকৃতের দেয়ালে ক্ষয় তৈরি করতে পারে। এই ক্ষয়ের কারণে, শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি হ্রাস পায়।

ক্যাফেইনযুক্ত ক্যাফেইনযুক্ত
এ ছাড়াও ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় খাবেন না। এসব খাবার শরীরের কোনো উপকারেই আসে না বরং ক্লান্তি ও অসুস্থতা বাড়িয়ে দেয়।

সবজি বিহীন খাবার
এই সময় সবজি বহুল খাবার বাদ দেওয়া কোনোভাবেই ঠিক না। তাছাড়া এই সময় শরীরে প্রচুর পানির প্রয়োজন। তাই সাধারণ পানির পরিবর্তে কুসুম গরম পানি পান করুন।

সতর্কতা
উপরের পদ্ধতিগুলো প্রতিকারক হিসেবে নয় বরং চিকিৎসার পাশাপাশি সম্পূরক খাবার হিসেবে খাওয়া উপকারী। নিয়মিত খাওয়া-দাওয়ার পাশাপাশি রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরের প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দিলে ঘরোয়াভাবে এসব খাবারের মাধ্যমে প্রতিরোধ করতে পারেন। প্রাথমিক লক্ষণের পরেই ডেঙ্গু দ্রুত বাড়তে পারে। তবে সমস্যা বেশি হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের চিকিৎসা নেয়া উচিত।

সূত্র: Google,স্টাইলক্রেজ, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, রয়টার্স, বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল ইত্যাদি।